বাংলাদেশের যুবসামজের তরুণ্য হু-হু করে বেড়েই চলছে। দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠি হলো যুবসমাজ। তাদের এই আগুনসম তারুণ্য শক্তি যে কোন দেশের সম্ভাবনাময় উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের যুবসমাজ সেই মহান কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করে যাচ্ছে। সমাজ ও দেশ গড়ার কাজে তাদের অংশগ্রহণ ও অবদান অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
দেশের এই যুবশক্তিকে সঠিকভাবে যদি নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেয়া যায়, তবে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যুবসমাজ ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক খেলাধূলার আয়োজন, শিল্প-সাহিত্য চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিবার, সমাজ ও জাতিকে গতিশীল রেখেছে। বর্তমান নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি বিদেশী সংস্কৃতি চর্চাতেও এই যুবসমাজের জড়িত হতে দেখা যাচ্ছে। এ যুবসমাজ দেশের অভ্যন্তরে লেখাপড়া যেমন করছে, তেমনি দেশের বাইরে গিয়েও বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি অর্জন করে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তাদের চলার পথ সীমাহীন, তাদের সম্মুখপানে চলার পথ। কোনো ঘাত-প্রতিঘাত তাদের চলার পথকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারবে না বলেই বিশ্বাস করি।
বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে এই শক্তিমান যুবগতিকে ব্যবহার করা ও সঠিক পথ নির্দেশনা দেয়া একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদীয়মান যুবসমাজ অপটিকাল ফাইবারের সুবাদে সহজেই জ্ঞান সাগরে সাঁতার দিতে শুরু করেছে। কোনো বিপদ তাদের চলার গতিকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে না, বিপদকে আমলে না নিয়ে নতুন কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ার একটি মানসিকতা বিকশিত হচ্ছে। তারুণ্যের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা-চেতনাকে প্রভাবিত করেছে অনেকাংশে। আবার এর উল্টো দিকেও সমাজে ডালপালা মেলে ধরেছে, অনেকাংশে আবার এর উল্টো দিকেও সমাজে ডালপালা যে মেলে ধরছে না সেটা বলা অনিশ্চিত। কিন্তু অসৎ সঙ্গ উজ্জ্বল জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যুবশক্তিকে ক্ষয়িষ্ণু পথে প্রভাবিত করছে। পরিবারে তাদের নিয়ে উদ্ধেগ যেমন বাড়ছে, তেমনি পারিবারিক সহিংসতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ-কেউ পরিবারে বোঝাস্বরুপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুবসমাজের একটি বড় অংশ জড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটের নেশায়। আত্মগঠনের সময়ে মানানিবেশ না করে নানা ইলেট্রিক্যাল ডিভাইস, গেমস্ এ্যাপসে সময় অপব্যবহার করছে। নিজের ও পরিবারের সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। তাদের দেখা-দেখি অনুজরাও নানা বদভ্যাস গড়ে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, হোয়াটস্ এ্যাপস, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ওয়েবসাইট ইত্যাদির প্রভাবে সহজেই প্রভাবিত হচ্ছে বর্তমান যুবসমাজ। নানা কৌশলে এক শ্রেণীর লোক তাদের নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নিচ্ছে ও অপরাধচক্রের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। অল্প বয়সী মেয়েদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে যেমন; প্রতারণা করছে, তেমনি কিছু অভিভাবকও দায়িত্বহীন আচরণ করছে যা তাদের সন্তানদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে যথাযথ গঠন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সন্তানদের অপরাধ ও জঙ্গীবাদের মতো ভয়ঙ্করী অপকর্মের সাথে যুক্ত হওয়া পরিবার ও সমাজের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়। পরিবার ও সমাজকে এ ধরণের আপরাধ ও বিপদসংকুল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখনই সচেষ্ট না হলে ভয়াবহ পরিণতির দিকে সমাজ যে কোন সময় প্রভাবিত হতে পারে। যুবশক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে যুবাদের যেমন বড় ভূমিকা রয়েছে, তেমনি অভিভাবকদের দায়িত্বও অপরিসীম। পরিবার যদি নৈতিক জীবন-যাপন করে, সেখানে সন্তানেরাও মানবিক গঠনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায়। প্রার্থনাপূর্ণ জীবন ও নৈতিক শিক্ষা জীবনকে সুন্দর ও উপভোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখে।
যুবশক্তি জাতি গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাই তাদের সঠিক পথে গড়ে তোলা জাতির মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য। কাজেই, তাদের গঠনদানে সমাজ ও রাষ্ট্র কোনভাবেই যাতে কার্পণ্য না করে। যুবসমাজ গঠনে পরিকল্পিত কাঠামো ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা আমাদের প্রয়োজন কেননা এর মধ্যদিয়েই দেশ একটি সৃষ্টিশীল ও যুবশক্তিতে সমৃদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্র উপহার পাবে। আসুন তাদের এই পথ চলায় কামারডাংগা খ্রীষ্টিয় শান্তি একতা যুব সংঘের সাথে সবাই সামিল হই।
বাবুল সরকার বাপ্পী